বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেলবিজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনুস দুবাই পৌঁছেছেন। তার আগমন ঘিরে বন্ধ হওয়া শ্রমবাজার, কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে আশার আলো দেখছেন আমিরাত প্রবাসীরা।
দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য তিন দিন ব্যাপী ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট ২০২৫-এ অংশ নিতে এমিরেটস এয়ারের একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় রাত ১১টায় দুবাই বিমান বন্দরে অবতরণ করেন ড.মুহাম্মদ ইউনুস। এ সময় বিমানবন্দরের আল মাজলিস লাউঞ্জে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রীড়া মন্ত্রী আহমাদ বেলহুল আল ফালাসি।
মুহাম্মদ ইউনুসের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকে কেন্দ্র করে প্রবাসী বাংলাদেশীরা আশার আলো দেখছেন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনেক বছর ধরে বাংলাদেশীদের ভিসা বন্ধ রয়েছে। ফলে সাধারণ শ্রমিকের সাথে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ করতে না পেরে অন্য দেশের শ্রমিক নিয়োগ করায় বিপুল অঙ্কের রেমিটেন্স হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
গত ডিসেম্বরে ও ৩৭০ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স প্রেরণ করেছে আমিরাত প্রবাসী শ্রমিকরা। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে সেই রেমিটেন্স প্রবাহ কমে আসছে। এছাড়া গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সমর্থনে সংহতি জানিয়ে মিছিলে অংশ নেওয়ার অপরাধে ১৯৬ প্রবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং এখনো আটক রয়েছেন অনেক প্রবাসী। আটক বাংলাদেশীদের মুক্তি এবং ক্ষমাপ্রাপ্ত প্রবাসীরা যাতে পুনরায় আরব আমিরাতে ফিরে আসার সুযোগ পায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে, এই আশায় বুক বেঁধেছেন আমিরাত প্রবাসীরা।
এ বিষয়ে আমিরাত বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম তালুকদার বলেন,বিশ্ব নেতৃত্বসহ আমিরাত সরকারের কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেই ইমেজকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের শ্রম ভিসা চালু,জুলাই বিপ্লবে অংশ নেওয়া আটক বাংলাদেশীদের মুক্তি ও সকল ক্ষমাপ্রাপ্তদের পুনর্বাসন করতে পারবেন বলে আশা করি।”
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র দুবাইয়ে তার অংশগ্রহণকে ঘিরে বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে আশাবাদী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা।আবুধাবির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা মোঃ সিফাত উল্লাহ জানান,প্রবাসে আমাদের ব্যবসায়ের প্রধান অন্তরায় শ্রম ভিসা বন্ধ থাকা।চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগ করতে না পেরে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এ বছর ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট ২০২৫-এ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ছাড়া অংশ নিয়েছেন বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান,১৪০টি দেশের প্রতিনিধি এবং শতাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোকে একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।যা সকলের অর্থনৈতিক,সামাজিক ও সরকারি অগ্রগতিতে ন্যায়সম্মত উন্নয়নে উৎসাহিত করে।সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, মিডিয়া,বিমান চলাচল,পরিবহন ও পর্যটন সহ গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক খাতের ওপর আলোচনা করবেন।
বাংলাদেশ থেকে প্রধান উপদেষ্টার অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি শক্তিশালী করার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার সুযোগ তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত প্রবাসীরা মনে করছেন,ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ তার বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও সুসংহত করতে পারে।
এ বিষয়ে সমাজ কর্মী ও কলম একাডেমি ইউএই-এর সভাপতি আবু তৈয়ব চৌধুরী বলেন,’আমরা আশাবাদী যে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট শেষে বাংলাদেশ ও আমিরাতের মধ্যকার বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে।
খুলনা গেজেট/এইচ